Avoid Tax Fraud!
This document is originally written by Mahmud Hasan, M.Sc., Writer & Poet (Western University).
Year of Publication: 2017
©PBSCU Any unauthorized use of this article, including copying or editing is prohibited. If you want to use the article, you need to take permission from us: pbscuadm@gmail.com or from the author and you must mention the author's name and the group's name in all cases.
ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের লোকজন যাঁরা খেনাডায় বিভিন্ন জিনিসের দোকান চালান, তাঁদের মাঝে একটা কমন টেনডেন্সি আছে ট্যাক্স না দেয়ার। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্যে এঁরা নানা রকম ফন্দি ফিকির করেন। যেমন, কেউ কেউ ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড একসেপ্ট করেন না। কারণ ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডে পেমেন্ট নিলে সেটার প্রমাণ থাকে, তখন ট্যাক্স ফাঁকি দেয়াটা কঠিন হয়ে যায়। যদি ক্যাশ নেন, তাহলে কত টাকা সারাদিনে কামালেন তার কোন সঠিক তথ্য কোথাও রেকর্ডেড থাকে না। এখন আপনার বিক্রি পাঁচ হাজার ডলার হওয়ার পরও আপনি যদি দাবী করেন যে আপনার বিক্রি আসলে দু'শ ডলার হয়েছে তাহলে কারও কিছু বলার নেই। এতে ব্যবসায়ী এমনিতে যা কামানোর তা তো কামালেনই, উল্টো যদি তিনি বছরশেষে হিসেব দেখান যে তাঁর বাৎসরিক রোজগার হয়েছে খুব কম, তিনি উল্টো সরকারের কাছ থেকে লো আর্নার হিসেবে কিছু বেনিফিট পান।
ক্রেডিট কার্ড একসেপ্ট করার আসলে কিছু খরচ আছে, একটু বড় ব্যবসা হলে সেই খরচটা তেমন গায়ে লাগে না, তবে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ক্রেডিট কার্ড একসেপ্ট করাটা একটু কষ্টকর সেটা ঠিক। তবে ডেবিট কার্ড একসেপ্ট করায় কোন সমস্যা না থাকলেও অনেক দোকানে দেখা যায় পাঁচ ডলারের নিচে কোন পেমেন্টে ডেবিট কার্ড ইউজ করতে চাইলে তাঁরা অতিরিক্ত পঁচিশ সেন্টস বা পঞ্চাশ সেন্টস চার্জ করেন। আমি ঠিক জানি না এটা তাঁরা লিগালি করতে পারেন কিনা, তবে এটা নিয়ে কারও তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। মূল কারণটা এই যে এইসব দোকানের কাস্টোমার যাঁরা তাঁরাও মূলত ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের লোকজন, এবং তাঁরা এইসব বিষয়ে মাথা ঘামান না। প্রচুর দোকানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এমন হয়েছে যে যখন আমি কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতে চেয়েছি, দোকানের ব্যবসায়ী বলেছেন, কার্ডে টাকা দিলে ট্যাক্স দিতে হবে, ক্যাশে টাকা দিলে ট্যাক্স দিতে হবে না। এই ঘটনাগুলো টরন্টো এলাকায় খুব বেশি ঘটে। যেহেতু অন্টারিওতে ট্যাক্সেবল কোন পণ্যের উপর ট্যাক্স নেয়া হয় ১৩%, কাজেই একটা পণ্যের মূল্য বিশ ডলার হলে সেটার সঙ্গে আরও ২.২৬ ডলার ট্যাক্স দিতে কষ্ট হয় তো বটেই। কাজেই কাস্টোমারকে যখন বলা হয় যে ক্যাশ দিলে আর ট্যাক্স দেয়া লাগবে না, তখন কাস্টোমারও ট্যাক্স না দিতে উৎসাহিতই হন। আর ক্যাশে টাকা নিয়ে দোকানদার নিজের সেলস যতটা পারেন কম দেখিয়ে নিজের ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিতে থাকেন। বছরের পর বছর এইসব করে করে তাঁরা টাকার পাহাড় জমান।
বিপদে পড়ে যান অফিস-আদালতে কাজ করা চাকুরিজীবিরা, যাঁদের বেতন একাউন্টিং সফটওয়ারে হিসাব হয়ে প্রতিটা স্টেপে রেকর্ড রেখে সব ধরণের ইনকাম ট্যাক্স কেটে রেখে তবেই দেয়া হয়। তাঁরা এমনিতেই বেতনের টাকা থেকে একটা বড় অংশ ট্যাক্স দেন, আবার দোকান টোকানে কেনাকাটা করতে গেলে ক্যাশ দিতে বাধ্য হওয়ায় সেখানেও নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে এইসব অসৎ ব্যবসায়ীকে টাকার পাহাড় গড়তে সাহায্য করেন। প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে তাঁরা কেন এইসব দোকানে যান? কেন ওয়ালমার্ট বা এই ধরণের বড় গ্রোসারি স্টোরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করতে যান না? উত্তরটা হচ্ছে এই যে, ওয়ালমার্টে গেলে আপনি অন্য সকল সামগ্রী পেলেও দেশী শাকসবজি বা মাছ-মাংস পাবেন না। যদি কেউ আমার মত রিজিড হন যে, 'দেশী শাকসবজি লাগলে খামু না তাও দেশি দোকানে গিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়া দোকানদাররে টাকা কামাইতে দিতে হেল্প করমুনা' তাহলে ভিন্ন কথা। মানুষজন সাধারণত এমন রিজিড হন না নানাবিধ কারণে, এবং সেই সুযোগটা এইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা নেন। অন্টারিওর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার অধিকার আছে যে কোন মুডে পেমেন্ট একসেপ্ট করার। অর্থ্যাৎ, যদি কেউ চান তাঁর দোকানে কেবল ক্যাশই নিবেন, সেটা করার সম্পূ্র্ণ অধিকার তাঁর আছে। এই সুযোগটার সম্পূ্র্ণ সদ্ব্যবহার তাঁরা করেন।
এই ক্যাশের ফ্লো ঘটার কারণে আরও কিছু সমস্যা দেখা যায়। দোকানগুলোতে যাঁরা কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের বেতন দেয়াতেও দুনম্বরি করা সম্ভব হয়। যেমন অন্টারিওতে চাকরির শর্ত হচ্ছে একজন এমপ্লয়িকে আপনার মিনিমাম পেমেন্ট দিতেই হবে, যেটা এই মূহুর্তে ঘন্টায় 11.6 ডলার। অর্থ্যাৎ, একজন এমপ্লয়িকে কাজে রাখলে ঘন্টায় আপনাকে তাঁকে বেতন দিতে হবে 11.6 ডলার এবং সেখান থেকে ট্যাক্স দিতে হবে সরকারকে। বিষয়টা শুনতে চমৎকার শোনালেও বাস্তবক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অনেকেই আছেন, যাঁদের স্টাডি পারমিট এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে বা ওয়ার্ক পারমিট এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে, অর্থ্যাৎ ভ্যালিড কোন কাগজ নেই খেনাডায় থাকার। তাঁদের তো কাজ লাগবে। অথবা একজন ছাত্র, যাঁর সপ্তাহে বিশ ঘন্টা পার্ট টাইম কাজের অনুমতি আছে, সে যদি পড়াশোনা বাদ দিয়ে চল্লিশ ঘন্টা কাজ করতে চায় বা একুশ ঘন্টাও কাজ করতে চায়, তাঁর সেই অতিরিক্ত একটা ঘন্টা কিন্তু আসলে অবৈধ। অথবা একজন পিআর যিনি এসে অনেক চাকরির জন্য ছোটাছুটি করছেন কিন্তু কিছুই পাননি অথচ তাঁর বেঁচে থাকার জন্য কিছু রোজগার প্রয়োজন কাজেই কাজ পেতে তিনি খুবই ডেসপারেট। একজন অসাধু ব্যবসয়াী কী করেন, এইসব কেউকে নিয়োগ দেন, বলেন যে, তোমাকে নগদ অর্থ্যাৎ ক্যাশে টাকা দেব, তুমি কাজ করবে? যেহেতু তাঁর রাজী না হয়ে উপায় নেই, সে রাজী হয়। অসাধু ব্যবসায়ী তখন বলেন তোমাকে ঘন্টায় আট ডলার করে দিব, বা পাঁচ ডলার করে দিব, অর্থ্যাৎ আইন অনুযায়ী যেই ১১ ডলার ৬০ সেন্টস দেয়ার কথা সেটা তিনি দিবেন না, তখন এমপ্লয়ির আসলে কিছু বলার থাকে না, কারণ তিনি নিজেও তো কাজটা করতেই চাইছেন হয় অবৈধ ভাবে অথবা তাঁকে জাস্ট টিকে থাকতে হবে। কেউ যদি চায়ও যে সেই এমপ্লয়ারের বিরূদ্ধে অভিযোগ করবে, সেটা করতে পারে না, কারণ একে তো তার ভ্যালিড কোন কাগজপত্র নেই, দ্বিতীয়ত যেহেতু ক্যাশে টাকা দেয়া হচ্ছে, দোকানের রেকর্ডে যে এমপ্লয়ি নেয়া হয়েছে এমন কোন তথ্যও নেই। কে কী করবে এখানে?
যাঁরা এইভাবে ক্যাশ দিতে বাধ্য করেন কাস্টোমারকে এবং যেসব কাস্টোমার নিজেরাও এইসব করতে আগ্রহী হন কিছু টাকা কম দিয়ে একটা জিনিস কিনে ফেলতে, তাঁরা কেন যে খেনাডায় এগুলো করেন আমার বুঝে আসে না। প্রথম কথা, নিজের দেশ থেকে তাঁদেরকে খেনাডায় আসতে কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি বা বাধ্যও করেনি। তাঁরা স্বেচ্ছায় এসেছেন। এখন একটা দেশে যদি আমি নিজ থেকে যাই, সেই দেশের আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তো আমার থাকা উচিৎ। আসলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নিজের দেশেও থাকা উচিৎ, তবু সেটা কেউ করেন না দেখে হয়তো সেটাতে দেশের লোকজন অভ্যস্ত। কিন্তু যেখানে মানুষ আইনের প্রতি সাধারণত শ্রদ্ধাশীল, সেখানে স্বেচ্ছায় গিয়ে বেআইনি ও অনৈতিক কর্মকান্ড করা ও সেটাতে ইনভলভড হওয়াটা আমার কাছে খুবই খারাপ মনে হয়। (এ পর্যায়ে আমি কিছু কমেন্ট আশা করছি যেমন (১) আসল খেনেইডিয়ান বলে কিছু নেই (২) খেনেইডিয়ানরা নিজেরাও কী কী অনৈতিক বা বেআইনি কাজ করেছে সেটার কিছু উদাহরণ ইত্যাদি। ভাই, আপনি আপনার দেশে বসে চুরি করেন সেটা এক বিষয়, আর রোহিঙ্গারা আপনার দেশে এসে চুরি করলে সেটা সম্পূর্ন ভিন্ন বিষয়। যাহোক, এইসব কমেন্টের অপেক্ষায় থাকলাম।)
যাহোক, ক্যাশের ফ্লো যেই দেশে প্রয়োজনই নাই, সেই দেশে অতিরিক্ত ক্যাশের ফ্লো ঘটালে যা হয় তাই হয়েছে। টরন্টোর গায়ে গা লাগানো দু'টা শহর মিসিসাগা ও ব্রাম্পটন। দু'টা শহর মিলে একটা কাউন্টি, যেটার নাম রিজিওন অফ পিল। এই রিজিওন অফ পিলের পুলিশ কয়েকদিন আগে একটা স্টেটমেন্ট রিলিজ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ১০০ ডলারের জাল নোটে ছেয়ে গেছে টরন্টো ও আশেপাশের এলাকা। নাগরিকদের একশ ডলারের নোট লেনদেনের ক্ষেত্রে হয় বিরত থাকতে অথবা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে রিজিওন অফ পিল পুলিশ পরামর্শ দিচ্ছে। পুলিশ বলেছে যতগুলো জালনোট এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে সেগুলোর সবগুলোর নাম্বার একই। খুব পরিচিত মনে হচ্ছে না বিষয়টা? পাক-ভারত উপমহাদেশে এইসব বিষয় হরহামেশাই ঘটে। আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন একদিন তো ডাচ বাংলা ব্যংকের এটিএম বুথ থেকে পাঁচশ টাকার একটা জাল নোট পেয়েছিলাম, আমি কেন সেই নোট পেয়ে এটিএম বুথের ক্যামেরার সামনে ধরিনি সেই জন্যে ডাচ বাংলা কর্তৃপক্ষ আমার অভিযোগ আমলে নেয়নি, আমি পাঁচশ টাকা ধরা খেয়েছিলাম। এইসব ঘটনা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে খুব সাধারণ বিষয়, এখন এটা খেনাডাতেও শুরু হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, একটা অপরাধ কখনও একটা এলাকাতে শান্তির জন্ম দেয় না, একটা অপরাধ আরও দশটা অপরাধেরই জন্ম দেয়। এই দেশে সবগুলো ব্যাংকে সবগুলো প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে লেনদেন করা যায়, অনলাইন থেকে কিছু কেনা বা খেনাডার বাইরে থেকে কিছু কেনাও খুব সহজ একটা বিষয়। চেকবইয়ের ব্যবহার দৈনন্দিন কর্মকান্ডে, ছোটখাট ব্যবসায় বলতে গেলে নেই। এমনকি ব্যংক ড্রাফট সহ অন্যান্য ডকুমেন্টও অনলাইনেই তৈরী করা যায়, ব্যাংকে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। এমন একটা জায়গায় যখন কেবল ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্যে কিছু মানুষজন ক্যাশের অপ্রয়োজনীয় ফ্লো তৈরী করে, তখন সেখানে জাল নোট ছড়িয়ে পড়াটা খুব অস্বাভাবিক তো নয়। এখন তো একশ ডলারের জাল নোট হয়েছে (এটাই খেনেইডিয়ান কারেন্সিতে সর্বোচ্চ মানের নোট), ভবিষ্যতে পঞ্চাশ ও বিশ ডলারের নোটও হয়তো জাল হবে, সেটার সংবাদ শোনার জন্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে অপেক্ষা করছি। এবং একই সাথে যেইসব অসাধু ব্যবসায়ী ও ক্রেতা শুধুমাত্র ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য ক্যাশে লেনদেন করতে উৎসাহ দেন তাঁদের প্রতি একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করছি।
জালনোট একটা বাজারে ছড়িয়ে পড়লে সেটার আফটার এফেক্ট কী হয় সেটা তো কম বেশি সবাই-ই জানেন, ইকোনমিক্সের বেসিক বিষয়গুলো তো সবাই-ই কম-বেশি পড়ে এসেছেন। অপেক্ষায় থাকুন, স্বপ্নের দেশ বৃহত্তর খেনাডার এইসব রূপও আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসবে সবার সামনে। আমি শুধু এইটুকুই বুঝি কমন সেন্সে, এই দেশের সামনে ভালই বিপদ অপেক্ষা করছে।