ফ্রেঞ্চ শিক্ষা – উচ্চশিক্ষা, ক্যারিয়ার ও স্থায়ী নিবাসের প্রেক্ষিতে

This document is originally written by Prithvi Shams, M.Engg Student in Mechanical Engineering (Concordia University).


Year of Publication: 2018


©PBSCU Any unauthorized use of this article, including copying or editing is prohibited. If you want to use the article, you need to take permission from us: pbscuadm@gmail.com or from the author and you must mention the author's name and the group's name in all cases.


আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে (Alliance Française de Dhaka) আমাদের সাথে প্রচুর পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ক্লাস করতেন। সাধারণত যতোটুকু শিখলে উনারা ফরাসি-ভাষায় জাতিসংঘের মিশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন ততোটুকুই শিখতেন; তবে এক এএসপি স্রেফ নিজের আগ্রহ আর আলিয়ঁসের চমৎকার আবহে অনুরক্ত হয়ে আমাদের সাথে প্রায় আড়াই বছর ক্লাস করেছিলেন। একদিন কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “১৬ বছর স্কুল-কলেজ-ভারসিটিতে ইংরেজি পড়ে যতোটুকু ইংরেজি শিখেছি, গত দুই বছরে তার চেয়ে বেশি ফ্রেঞ্চ শিখলাম।” কথাটা শুনে আমার একটা উপলদ্ধি হয়েছিলো - আমাদের জাতীয় কারিকুলামে এতো বাজেভাবে ইংরেজি শেখানো হয় যে বিদেশী ভাষা শেখার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে তীব্র ভীতি কাজ করে। আমরা অংক মুখস্থ করার মতো করে ইংরেজি শিখি; তাই না পারি ইংরেজি, না পারি অংক! ১৬ বছর যাবত ইংরেজি পড়েও IELTS এ ৭ তুলতে যদি আমাদের ঘাম ছুটে যায়, IELTS এর ভয়ে যদি আমরা দালাল ধরে ESL কোর্সে কানাডা যাওয়ার স্বপ্ন দেখি, তাহলে বুঝেন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি ভীষণ রকমের অকৃতী! এহেন পরিস্থিতিতে মানুষকে ফ্রেঞ্চ শিখতে বলাটা রীতিমতো দুঃসাহসের পর্যায়ে পড়ে! তবুও ধৈর্য্য ধরে আমার দীর্ঘ বক্তব্যটা পড়ুন।


দুনিয়ার সবাই তো ইংরেজিতে কথা বলে, কেন ফ্রেঞ্চ শিখবো!


উহু, ভুল ধারণা। প্রাক্তন ইংরেজ উপনিবেশ বা কমনওয়েলথ দেশগুলো বাদে ইংরেজি তেমন প্রচলিত ভাষা নয়। কানাডার কেবেক প্রদেশ অথবা ইউরোপে বসবাসকারী বাঙ্গালীরা এটা হাড়ে হাড়ে টের পায়!


ভাষাভাষীর সংখ্যা বিচারে ফরাসি পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা(আগে রয়েছে ইংরেজি – মানদারিন – হিন্দি – স্প্যানিশ এবং আরবি)। ২০১৫ সালে সমীক্ষা অনুসারে ইউরোপে ৪০%, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির অঞ্চলে ৩৫%, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ১৫%, আমেরিকাতে ৮% এবং এশিয়াতে ১% মানুষ ফরাসি ভাষায় কথা বলে। ইংরেজিরে পরে ফরাসি ভাষাই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অধীত ভাষা। ইউরোপে ফ্রান্স বাদে বেলজিয়াম (৪৫%), সুইজারল্যান্ড (২০%) এবং লুক্সেমবুর্গে মানুষ ফরাসি ভাষায় কথা বলে; তবে এটা মূলত ফরাসি যাদের মাতৃভাষা তাদের পরিসংখ্যান, এরা ছাড়াও দেশগুলোর বাকি জনগোষ্ঠী ফরাসি ভাষায় পারঙ্গম। ফ্রান্সের দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার হেতু ২০২৫ নাগাদ জার্মান ভাষাকে ছাপিয়ে ফরাসিই হবে ইউরোপের সর্ববৃহৎ ভাষা।


প্রচুর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দাপ্তরিক কাজ ফরাসি ভাষায় সম্পাদন করে। জাতিসংঘ সচিবালয়ের দু’টো দাপ্তরিক ভাষার মধ্যে ফরাসি অন্যতম। ইউরোপিয় ইউনিয়নের তিনটি দাপ্তরিক ভাষার মধ্যে একটি হলো ফরাসি। ন্যাটো, আন্তর্জাতিক অলিমপিক কমিটি, ইউরোপীয় কাউন্সিল, Organization for Economic Co-Operation and Development(OECD), Organization for American States, Eurovision Song Contest, European Space Agency, World Trade Organization, NAFTA চুক্তিবদ্ধ দেশসমূহ, Red Cross, Amnesty International, Médecins Sans Frontières (Doctors Without Borders) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে ফরাসি অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা। ইউরোপিয় ইউনিয়নের অধীনস্থ EU Parliament এ যতো আইন পাস হয়, সব আগে ফরাসি ভাষায় লিখিত হয়, তারপর ইংরেজিতে অনূদিত হয়! প্রচুর আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে ফরাসি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং হয়েছে। উদাহরণ – European Court of Justice, European Court of Human Rights, African Court on Human and People’s Rights, Caribbean Court of Justice, International Court of Justice ইত্যাদি। MIT এর অর্থনীতিবিদ Albert Saiz হিসাব করে দেখিয়েছেন পৃথিবীর অনেক দেশে ফরাসি ভাষায় পারঙ্গম হলে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা যায়। ২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ব্রিটেনের ৫০% ম্যানেজার ব্যবসায়িক কাজে ফরাসি ব্যবহার করে লাভবান হোন।


চাকুরি-বাকুরির প্রসঙ্গ বাদ দেই। ফরাসি অত্যন্ত শ্রুতিমধুর একটা ভাষা। ইংরেজিতে কথা বলে বড়জোর কাজ আদায় হয়, তবে ফরাসিতে কথা বলে আরাম পাওয়া যায়। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে প্রতিটা ক্লাসে আমাদের কিছু ফরাসি গান ও শর্ট-ফিল্ম (court-métrage) দেখানো হতো, সেসব শুনে ও দেখে বুঝতাম ফরাসি সংস্কৃতির প্রতি দুনিয়াজুড়ে কেন মানুষের এতো মোহ, কেন ফরাসি ভাষাকে প্রেমের ভাষা বলা হয়! স্প্যানিশ ভাষাকেও অবশ্য প্রেমময় ভাষা বলা হয়; ফরাসি ও স্প্যানিস একই ভাষিক পরিবারভুক্ত হওয়ায় একটা ভাষা জানলে আরেকটার অনেক শব্দ ও ব্যকরণ পরিচিত ঠেকবে। ফরাসি ভাষার একটা বিশেষত্ব হলো ইংরেজি বা জার্মানের মতো বড় বড় শব্দ নেই; একটা ধারণা যতোই বিমূর্ত বা জটিল হোক, তা ব্যক্ত করতে খুব সরল ও ছোট্ট একটা শব্দ ব্যবহৃত হয়। ফরাসি ভাষায় শব্দগুলোর ধ্বনি একটার সাথে আরেকটা মিশে যায়, তাই কথা বলতে গেলে নদীর স্রোতের মতো কলকল করে শব্দগুলো প্রবাহিত হয়। একারণে ফরাসি ভাষায় দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে কিংবা দীর্ঘ লেখা পড়তে খুবই আরাম, যেটা আমি ইংরেজিতে একদমই পাই না!


আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – কেবেক প্রদেশের সাথে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের চুক্তি আছে। কেবেকের পেশাদার ও একাডেমিক সারটিফিকেট ফ্রান্সে স্বীকৃত হয়, এবং ভাইস-ভার্সা। যদি ভবিষ্যতে কখনও কানাডা ছেড়ে ইউরোপ যেতে ইচ্ছে হয়, তবে ফরাসী ভাষা আপনার জন্য একটা গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে।


ফরাসি ভাষা নাকি অনেক কঠিন!


মোটেও না! বরং ইংরেজির চেয়ে সহজ!


বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ক্রিয়াপদগুলোর কোন নির্দিষ্ট কাঠামো নাই। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী না হলে কোন ক্রিয়াবাচক শব্দ দেখে বুঝতে পারবেন না সেটা কি ক্রিয়া, বিশেষ্য নাকি বিশেষণ। ফরাসি ও জার্মান ভাষায় ক্রিয়াবাচক শব্দগুলোর একটা নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে, পুরুষভেদে শব্দগুলোর রুপ একটা নির্দিষ্ট সূত্রানুসারে পরিবর্তন হয়, যাকে বলে conjugation। ইংরেজিতে conjugation খুব সহজ (I eat, you eat, they eat, he/she eats, we eat), কিন্তু ফরাসি/জার্মানে প্রতিটা পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা conjugation হওয়ায় প্রথমেই অনেকে ধাক্কা খায়। একভাবে চিন্তা করলে বাংলা ভাষাতেও কিন্তু জটিল conjugation আছে!


“আমি খাই, তুমি খাও, আপনি খান, তারা খায়, আমরা খাই ”


আবার “খাই” বলতে যে কাল বুঝায়, “খাচ্ছি” বলতে আরেক কাল বুঝায়। আমি বলবো এদিক দিয়ে ফরাসি/জার্মান বাংলার চেয়ে অন্তত সহজ!


মানুষের ভয় পাওয়ার আরেকটা কারণ হলো ফরাসি/জার্মান/স্পেনিশ প্রভৃতি ভাষায় বিশেষ্য-বিশেষণ পদের “লিঙ্গ” ব্যাপারটা খুব প্রকট। বাংলা ভাষায় চেয়ার-টেবিলের লিঙ্গ নাই, ইংরেজিতে নাই, কিন্তু ফরাসি/জার্মান/স্পেনিশ ভাষায় আছে!


la chaise > the chair > চেয়ার > der Stuhl


এখানে,


la - স্ত্রীবাচক অব্যয়


der - জার্মান পুরুষবাচক অব্যয়


ফরাসি ভাষায় যে বস্তু স্ত্রীবাচক, জার্মান ভাষায় একই বস্তু পুরুষ বাচক! জার্মান ভাষায় আবার neuter নামক আরেকটা তৃতীয় লিঙ্গ আছে। এক্ষেত্রে কার্ল মার্ক্সের বিখ্যাত বইটা উদাহরণ হিসেবে উদ্ধৃত করা যায়,


Das Kapital > Capital > Le Capital > পুঁজি


এখানে, Das – neuter বাচক অব্যয়, Le – পুরুষবাচক অব্যয়


ফরাসি/জার্মান/স্প্যানিশ ভাষায় কোন পদের কোন লিঙ্গ হবে তা নির্ণয়ে কোন বিধান নেই। যখন নিয়মিত এসব ভাষায় বই পড়বেন, পত্রিকা পড়বেন, গান শুনবেন, মুভি-সিরিজ দেখবেন, কথা বলবেন, তখন কোন পদের কোন লিঙ্গ এমনিই মনে গেঁথে যাবে। যদি পুরুষবাচক পদের পিছে ভুলক্রমে স্ত্রীবাচক অব্যয় জুড়ে দেন তাতে কোন ঘোরতর অপরাধ হবে না, শ্রোতা ঠিকই আপনার বক্তব্য বুঝবে!


একটা কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, ইংরেজি ভাষার অধিকাংশ শব্দ কিন্তু ফরাসি ভাষা থেকে এসেছে! আদিতে ইংরেজি ভাষা জারমানিক ভাষা পরিবারের অন্তর্গত ছিলো, আদি জার্মানের সাথে ইংরেজির অনেক মিল ছিলো(এখনও ইংরেজিতে জার্মান থেকে আগত কিছু শব্দ পাওয়া যায়); পরবর্তীতে ফরাসি নরম্যান গোত্র কয়েক শতক ইংল্যান্ড শাসন করলে ফরাসি শাসকদের অনুকূলে থাকার জন্য ইংরেজরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে বিপুল পরিমাণে ফরাসি উপাদান গ্রহণ করে। ইংরেজিতে যেকোন একটা শব্দ বের করুন, অভিধানে শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘাটুন, দেখবেন কোন না কোন ফরাসি শব্দ হতে অপভ্রংস হয়ে এসেছে! প্রচুর ফরাসি শব্দ হুবহু ইংরেজিতে ব্যবহৃত হচ্ছে (রেস্তোরাঁতে à la carte মেনু, savoir faire, bon mot, bon voyage, bon apétite, joie-de-vivre ইত্যাদি) আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে পরীক্ষা দেয়ার সময় যখন কোন একটা শব্দ মনে করতে পারতাম না, তার অনুরুপ ইংরেজি শব্দটাই ফরাসি বানানে লিখে দিতাম, এবং অধিকাংশ সময়ে সেটা সঠিকও হতো! কয়েকটা উদাহরণ দেই,